চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ::: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে রাজমিস্ত্রীর কন্ট্রাক্টর আবদুল্লাহ্ আল মামুন (৩২) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে ও কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করার ঘটনা ঘটেছে।
গত বুধবার (৩১ মে) রাত অনুমান সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড খোয়াজনগর গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছুরিকাঘাতে আহত আবদুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী তাসলিমা আকতার কর্ণফুলী থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে রাজমিস্ত্রীর কনট্রাকে কাজ নেয়ার উপর চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। সে চাঁদা না পেয়ে মামুনকে হত্যার চেষ্টা করেছে এজাহারভুক্ত আসামিরা। চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান পাটোয়ারী সহ মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয় উক্ত মামলায়। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন খোয়াজনগর গ্রামের হৃদয় পাটোয়ারী, হাসান আহমেদ, তারেক পাটোয়ারী ও জাহাঙ্গীর পাটোয়ারী (সাবেক মেম্বার) । পুলিশ এ ঘটনায় ইমরান, তারেক ও হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে।
মামলার এজাহারের বিষয়ে বিবাদী পক্ষের পরিবার রয়েছে ভিন্ন বক্তব্য। ইমরান পাটোয়ারীর স্ত্রী সালমা খাতুন মুক্তা ও তারেক পাটোয়ারীর পিতা মনির আহমেদ বলছেন হামলার বিষয়ে আমাদের স্বামী-সন্তানের কোন ধারণাও নেই। তারা রাতে নিজ গৃহে ঘুমিয়ে ছিল। শেষ রাতে পুলিশ বাসায় এসে ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। সকালে শুনছি মামুনের উপর হামলা হয়েছে। দুপুরে মামুনের স্ত্রী তাদের নামে মামলা করেছে। বাসায় ঘুমের মধ্যে থেকে কি তারা হামলা করে এসেছে? আমরা মনে করছি পূর্ব শত্রুতার প্রতিশোধ নিতে তাদের উপর এই মামলা দিয়েছে প্রতিপক্ষ।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারী হোসেন নামক যুবকের হাত বিচ্ছিন্ন মামলার আসামি আজকের আহত এই মামুন। ইমরান পাটোয়ারী, তারেক পাটোয়ারী ও জাহাঙ্গীর পাটোয়ারী কে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছে একটি গোষ্ঠী।
এদিকে মামলার ৫ নং বিবাদী সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর পাটোয়ারী বলেন, উপজেলার পুরাতন ব্রীজঘাট এলাকায় আমার রং এর দোকান থেকে ঘটনার দিনে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমি সোজা আমার শহরের বাসায় চলে আসি। ঘুমিয়ে ছিলাম, মধ্যে রাতে হঠাৎ ফোনে খবর আসে মামুনের উপর হামলা করা হয়েছে। তাকে মেডিকেল নেয়া হয়েছে। মামুন আমার নিকটতম প্রতিবেশী হওয়াতে তার মায়ের সাথে আলাপ করে মামুনের অবস্থার খোঁজ নিয়েছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মামুনকে দেখতে মেডিকেলে ছুটে গিয়ে মামুনের মা'কে চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেছি। পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে জানাতে বলেছি। কর্ণফুলী থানায় এসে হামলার বিষয়ে পুলিশের সাথে আলাপ করেছি। কিন্তু দুপুরে পর জানতে পারি আমি নিজেও নাকি মামলার আসামি। কোন রকম হিসাবে মিলাতে পারছি না। আমার পরিবারের সদস্য, বাসার সিসি ক্যামেরা, আশেপাশের মানুষ, এমনকি ফোন রেকড় চেক করলে সব কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। একটা বিষয় তো ক্লিয়ার ইচ্ছে করে আমাকে আর আমার ভাই ইমরানকে ফাঁসানো ষড়যন্ত্র চলছে। এই হামলার বিষয়ে আমাদের কারোই কোন ধারণা ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিকটিম মামুনের সঙ্গী জানান, রাত সাড়ে দশটার দিকে মামুন মদ্যপান করে বাসায় গিয়েছে। সে যাওয়ার সাথে সাথে কেউ একজন আমাকে এসে খবর বললো মামুনকে আট দশজন মুখোশধারী লোক খোঁজ করছে। বিষয়টি জানানোর জন্য আমি তার কাছে লোক পাঠিয়েছি। বারোটার দিকে খবর পাই তার উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতালে আহত মামুন তার এক ভিডিও বক্তব্য বলেন, "ঘটনার দিন রাতে বাসা থেকে খাবার খাওয়া পর বাতাসে জন্য বাড়ির বাইরে আসলে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে আগত মামলার আসামিগন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বিনা বাকবিতন্ডা ছাড়াই এলোপাথাড়ি কুপাতে থাকে। চাঁদা দি নাই বলে তারা আমাকে জানে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।"
ঘটনার সত্যতা, মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়ে কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, "খোয়াজনগর গ্রামে যুবককে ছুরিকাঘাতে ঘটনায় ভিকটিম মামুনের স্ত্রী বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশাকরি তদন্ত করে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা হবে।"
0 মন্তব্যসমূহ